Blogs
ঐতিহ্যের টানে সোনারগাঁ’য় একদিন
নাইমুল হাসান কৌশিক
ছোটবেলা বইয়ের পাতায় পরিচয় প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁ এর পানাম নগরীর। কল্পনায় কত যে ঘুরেছি সেই রাজ্যের অলিতে গলিতে। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই সুযোগ হল সেই রাজ্যে ঘোরার। দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর হুট করেই পরিকল্পনা। বন্ধুরা সবাই মিলে তাই একদিনের জন্য ছুটে চলা সেই গৌরবময় ইতিহাসের সোনারগাঁয়। স্বপ্নের রাজধানীতে আনন্দের একটাদিন চিরস্মরনীয় হয়ে গেল। সোনারগাঁ থেকে বেড়িয়ে এসে কথাগুলো বলছিল নাজমুন নাহার ইতি।
গত ১ লা এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আমরা গিয়েছিলাম সোনারগাঁ এবং বাংলার তাজমহলের নারায়ঞ্জগঞ্জে। ভ্রমন যেমন বাড়তি আনন্দ দেয় তেমনি জ্ঞানের বিকাশে ভূমিকা পালন করে তাইতো বেরিয়ে পড়া বলছিল তুহিন। প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য আর প্রাচীন স্থাপনার দেয়োলে ইতিহাসের খোঁজে ক্যাম্পাস থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল ৮ টায়। রৌদ্রজ্জল সকালে একদল ঊচ্ছল, তারুণ্যদীপ্ত, প্রানবন্ত শিক্ষার্থীদের ছুটে চলা।
সারাটা পথে চললো হৈ-হুল্লোড়, নাচ আর গান। তানভীর, কাজল, বাবু আর সায়েমের গান, শামীম, জিহাদ, নাহার, মিথুন, রোখসানা আর ইতির নাচ জমিয়ে রেখেছিল পুরো ৪০ কিলোমিটারের পথ। দুপুর ১২টার সময় পৌছলাম তাজমহলে। তাজমহলের সামনে দাড়িয়ে মনে হচ্ছিলে আমরা আগ্রার তাজমলে এসেছি মন্থব্য আসাদের। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা এই বিশাল তাজমহল দেখে নয়ন জুড়িয়ে গেলো। দুপুরের খাবার শেষে চললাম ঈশা খাঁর স্বপ্নের অনুপম নগরী সোনার গাঁয়ের উদ্দেশে। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পৌছলাম দুপুর ২টার দিকে। ঢুকতেই চোখে পড়লো জয়নুল আবেদীনের অমর কীর্তি গরুর গাড়ীর ভাস্কর্য। সামনে তাকাতেই দেখি বঙ্গবন্ধুর বিশাল ভাস্কর্য যেন বলছে “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”।
লোকশিল্প জাদুঘরে কৌতুহলী চোখ প্রথমে পড়লো নৌকার উপর, কাঠের শিল্পে বাঙালীরা কতটা উন্নত তার প্রমাণ এই জাদুঘর। কাঠের পালকি, শাড়ী, সিন্দুক নাম না জানা কত জিনিস। নঁকশী কাথার নাম অনেক শুনেছি কখনো দেখার সুযোগ হয়নি, দেখলাম কাথা গুলোর উপর কত রকমের ছবি আঁকা। তারপর গেলাম ইতিহাসের তীর্থস্থান সোনাগাঁয়। নয়নাভিরাম ভবনগুলো স্থাপত্যশৈলী আর আভিজাত্য হার মানায় এ যুগের ইট-কংক্রিটের ভবনগুলোকে। যার সৌন্দর্যে আটকে যায় চোখ। ঐতিহ্যে সন্ধানে ইতিহাসের বারান্দায়। এক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে যাওয়া সেই প্রাচীন রাজা বাদশার শাসনামলে। চলল প্রিয় মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্ধী করার প্রতিযোগিতা। শেষ বিকেলে মেয়েদের হাড়িভাঙ্গা আর ছেলেদের মোরগ লড়াই অন্যরকম মাত্রা যোগ করে। পশ্চিমে সূর্যটা ডুবু ডুবু, এবার তবে ফেরার পালা!
#……..
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
যোগাযোগ: ০১৭৭৩৮৮৭০৪১
